এক রেলওয়ে স্টেশনের ভিখারির গল্প
এক রেলওয়ে স্টেশনের ভিখারির গল্প…
জীবন নিয়ে হতাশ এক লোক, দু’বেলা খাবারের জন্য এক রেলওয়ে স্টেশনে ভিক্ষা করে বেড়াতো। আজ এক স্টেশনে, তো কাল আরেক স্টেশনে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একদিন, ভিক্ষুকটির নজর আটকে গেল কেতাদুরস্ত এক ভ্রমনকারীর উপর। ভিক্ষুক ভাবলো, ভদ্রলোক নিশ্চই বেশ ধনী। খুব আশা নিয়ে তার কাছে ভিক্ষা চাইতে গেলো। অনেক্ষন ধরে ভিক্ষা চাওয়ার পরও ভদ্রলোক কিছুই দিলেন না। বরং বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে ভিখারিকে বললেন-
” তুমি যখন দেখছো আমি কিছুই দিতে চাইছিনা, কেন অযথা বিরক্ত করছো? আর দ্বিতীয় কথা হলো, ধরো তোমাকে কিছু পয়সা দিলাম, এর বিনিময়ে তুমি আমাকে কি দিবে?”
ভিখারি বললো – “আমার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই স্যার। আমি তো ভিক্ষা করেই খাই, আর আপনাকে দেওয়ার মতো কী সামর্থ্যই বা আছে আমার!”
ভদ্রলোক বললেন, “কিছুই যখন দিতে পারবেনা, তখন চাওয়াও বন্ধ করে দাও” এই বলে ভদ্রলোক জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। ভিখারি বুঝলো এখানে আর কিছু আশা না করাই ভালো। তবে ভদ্রলোকের কথাটি তার মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল। পরের ষ্টেশনে নেমে সে ভাবতে লাগলো,
”সত্যিই তো! আমি আসলে কী দিতে পারি?”
সে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। মাথা নিচু করে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল রেললাইনের পাশেই সদ্য ফুটে থাকা ছোট ছোট ফুলগুলোর উপর। সে ভাবলো, এবার যেই তাকে ভিক্ষা দিবে, তাকেই একটা ছোট্ট ফুল উপহার দিলে কেমন হয়?
পরের দিন থেকে যেই তাখে ভিক্ষা দিচ্ছিল, সবাইকে সে ফুল দেওয়া শুরু করলো। ছোট্ট একটা উপহার, কিন্তু সবার মন জয় করে নিল। এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ভিখারির সঙ্গে আবার দেখা হলো সেই ভদ্রলোকের। ভিখারি সেই ভদ্রলোকের সামনে গিয়ে দাড়ালো, “স্যার, এবার দেওয়ার মতো কিছু একটা আমার কাছে আছে।”
ভদ্রলোক কৌতহলী হয়ে তাকে কিছু পয়সা দিলেন। যথারীতি ভিখারী এবার তাকে একটি ফুল উপহার দিলো। ভদ্রলোক ভীষন খুশি হলেন আর বললেন, “এবার তুমি ব্যবসা করা শিখে গেছো, তুমি বুঝে গেছো লেনদেন কাকে বলে। জীবনে যদি কাউকে কিছু দিতে না পারো, তাহলে তোমার নেওয়ার কোনো অধিকারও নেই।”
একথাটাও ভিখারিকে ভীষনভাবে নাড়া দিল।
বিগত দিনগুলোতে ভিক্ষার বিনিময়ে ফুল দেওয়ায় মানুষের মুখের হাসি আর ধনাঢ্য ব্যাক্তির কথাগুলো তাকে প্রচন্ডভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলল। সে ট্রেন থেকে নেমে চিৎকার করতে লাগলো, “আজ থেকে আমি আর ভিখারি নই। আজ থেকে এক সফল ব্যবসায়ী!”
বছরখানেক পরের ঘটনা। ট্রেনে ঐ ধনাঢ্য ব্যক্তির পাশে স্যুটেড-বুটেড এক ভদ্রলোক বসা। ট্রেন ছাড়ার পর ধনাঢ্য ব্যক্তিকে সে জিজ্ঞেস করলো “চিনতে পারছেন স্যার? আপনার সাথে এটা আমার তৃতীয়বার দেখা”। ভদ্রলোক বললেন, “নাতো, আপনি মনে হয় ভুল করছেন। আমার তো মনে হচ্ছে এটিই আমাদের প্রথম দেখা”
ভদ্রলোক হেসে বললেন, “না স্যার, এর আগেও আমাদের দু’বার দেখা হয়েছে। আমি সেই ভিখারি, যাকে আপনি প্রথম দেখায় শিখিয়েছিলেন লেনদেন কাকে বলে। আর দ্বিতীয় দেখায় শিখিয়েছিলেন, যদি আমি জীবনে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতে পারি, তাহলে জীবনে অনেক বড় কিছু হতে পারবো। আপনার সাথে প্রথম দেখার পরপরই আমি রেললাইনের ধারে বেড়ে ওঠা ছোট ছোট ফুল তুলে মানুষকে দিতে শুরু করি। আর দ্বিতীয় দেখার পর ফুল কিনে বিক্রি করতে শুরু করি। আজ স্টেশনের পাশে আমার ফুলের অনেক বড় ব্যবসা। আমি সত্যিই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
এই ছোট্ট গল্পটি আমাদের অনেক কিছুই শেখায়। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে ”বিনিময়” শব্দটির মর্ম না বোঝেন, উদ্যমী হয়ে কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারেন, তাহলে কখনোই ভালো ফলাফল আশা করতে পারবেন না। মানুষ সত্যিই তার স্বপ্নের সমান বড়! আমাদের স্বপ্নটা যেমন বড় করতে হবে, তেমনি স্বপ্নটাকে ছোঁয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমও করতে হবে।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভাষায়
- “মানুষ যা চায়, তাই কি সে পায়?” {সুরা নাজম-২৪}
- “মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে” {সুরা নাজম-৩৯}
আসুন… দেরী না করে আজ থেকেই স্বপ্নটা ছোঁয়ার চেষ্টায় ঝাপিয়ে পরি…. আজই… এখনই….