ব্যাংকিং সিস্টেমের কথা শুনলেই অধিকাংশ মানুষের মাথায় যে শব্দটি ঘুরপাক খায় সেটি হচ্ছে সুদ বা মুনাফা।
সবাই মনে করে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো সরাসরি সুদের কারবার করে, আর ইসলামী ব্যাংকগুলো ইসলামকে ঢাল বানিয়ে একই কাজ ঘুরিয়ে পেচিয়ে করে। তারা মনে করে, কনভেনশনাল কিংবা ইসলামিক, ব্যাংক নামটাই যেন সুদের কারখানা। অথচ আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- “যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।” (সূরা আল যুমার, আয়াত-৯)
বর্তমানে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো সুদের বিষয়টাকে ঢাক ঢোল পিটিয়েই ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করে। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো যেটা করে সেটা কোনোরূপ বিবেচনা ছাড়াই সুদ, যা ইসলামে পুরোপুরি হারাম।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন”। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৫)
কিন্তু ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা নিজেদেরকে শতভাগ সুদমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে কারণ দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক স্কলারদের নিয়ে গঠিত একটি শরীয়াহ বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ইসলামিক ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট সমূহ পরিচালিত হয়। মুদারাবা, মুশারাকা প্রভৃতি পদ্ধতিগুলোকে ইসলামিক ব্যাংকগুলো অনুসরণ করে- যা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণভাবে হালাল।
কোনো ইসলামিক ব্যাংক বা ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন যদি শরীয়াহ মতো না চলে তাহলে সেই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শরীয়াহ বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ রূপে দায়ী থাকবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক হিসেবে আমাদেরকেও যথেষ্ট সচেতন থাকা উচিৎ এটা বোঝার জন্যে যে কারা শরীয়াহ মেনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কারা তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কেননা প্রত্যেকের নিজস্ব জবাবদিহিতা নিজেকেই দিতে হবে, অন্যের উপরে দোষ চাপিয়ে নিজে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ”একজনের পাপের বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (সুরা-ফাতির, আয়াত- ১৮)
তবে এর মানে এই নয় যে গুটিকয়েক ব্যক্তি বার প্রতিষ্ঠানের শরীয়াহ মানার ব্যর্থতার কারণে পুরো ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেমের দিকে আংগুল তোলার কোনো সুযোগ আছে। কিছু প্রশ্নের জায়গা থাকতেই পারে, যেমন দেশীয় আইনে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শত শত কোটি টাকা জামানত দিতে হয় এবং প্রতি বছর সেই টাকা থেকে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বড় অংকের সুদ পায়। এখন প্রশ্ন হলো ইসলামিক ব্যাংক ও ইনস্টিটিউট গুলো এই সুদের অর্থ কি করে? এই সুদের অর্থ তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে মিশিয়ে ফেলে না তো?
কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-” তোমরা হালালকে হারামের সাথে মিশিয়ে ফেলো না।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত-২)
ইসলামী শরীয়াহ সম্মত প্র্যাক্টিস হচ্ছে ইসলামিক ব্যাংক ও ইনস্টিটিউটগুলো সুদের সেই টাকা নিজেরাও গ্রহণ করতে পারবে না এবং ব্যাংকের কোনো অপারেশনাল কাজেও ব্যবহার করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটসমূহ সুদের পুরোপুরি বিপরীত কাজটাই করছেন। অবাক হলেন ! ব্যাখ্যা করা যাক – আপনাকে যদি বলি লাভের বিপরীত শব্দ কি? আপনি সাথে সাথেই উত্তর দেবেন ক্ষতি। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করি সুদের বিপরীত শব্দ কি? এবার আপনাকে নিশ্চিত কিছুক্ষণ ভাবতে হবে। সুদের বিপরীত শব্দ হলো “সাদাকাহ বা দান। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বাড়িয়ে দেন।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত- ২৭৬)
তাই আসুন আমরাও ইসলামিক ফাইন্যান্সের গুরুত্ব অনুধাবন করি এবং ইসলামের অন্যান্য বিষয়গুলো মানার সাথে সাথে নিজেদের অর্থনৈতিক জীবনেও ইসলামকে প্র্যাক্টিস করা শুরু করি ইনশাআল্লাহ।
১ম পর্ব পড়ুন এখান থেকে: লাভের বিপরীত শব্দ ক্ষতি কিন্তু বলুন তো সুদের বিপরীত শব্দ কি?