শীতের ছুটিতে গ্রামে ঘুরতে গিয়ে দেখলেন ছোট্ট একটা প্রজাপতি ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে মনে ভাবতে থাকলেন এই ছোট্ট একটি প্রাণীর ডানার ঝাপটা থেকে কি গোটা একটি ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়ে পুরো দেশকে তছনছ করে দিতে পারে?ভাবনাটি হাস্যকর এবং থিওরেটেক্যালি অবাস্তব শুনালেও বাস্তবে আসলে এটা খুবই সম্ভব! কিন্তু কিভাবে? চলুন দেখে আসা যাক…
রানা প্লাজা…রানা প্লাজা নামটি শোনার সাথে সাথেই আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে বীভৎস কিছু দৃশ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক কিছু মুখের প্রতিচ্ছবি। প্রায় ১২০০ তাজা প্রাণ নিমিষেই ঝরে যায় কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে। পঙ্গুত্ব বরণ করেন দু হাজারেরও বেশি মানুষ।
এই দুর্ঘটনার কথা স্মৃতিচারণ করলেই সবার প্রথমে নির্মাণ ত্রুটি বা ব্যক্তিস্বার্থের লোভ লালসার কথা উঠে আসলেও যে বিষয়টি সবার চোখ এড়িয়ে যায় তা হলো একটি ভবনের নির্মাণ ঝুঁকি এবং এ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স বা বিধিনিষেধ কে অবহেলা করে যাওয়া।শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ আর্থিক ক্ষতির কথা ধরলে হয়তো আমরা দেখতে পাবো কয়েকশ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়েছে, কিন্তু এক্টূ বিগ পিকচারের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাবো এই দুর্ঘটনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকেই ওলটপালট করে দিয়েছে। রানা প্লাজা ধ্বস পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পাই আমাদের রেডিমেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে একের পর এক হাজার কোটি টাকার সমমুল্যের চুক্তি বাতিল হতে থাকে। এর ফলে যেমন আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্প মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় ঠিক তেমনিভাবে বাতিলকৃত অর্ডারগুলো অন্যদেশে রিপ্লেস করা নিয়ে হিমশিম খেতে থাকে অর্ডার বাতিলকারী দেশসমূহও। একটু ভেবে দেখুন এই সব কিছুর শুরু আসলে কোত্থেকে শুরু হয়েছিল! রানা প্লাজার মালিক এবং এর সাথে জড়িত যারাই একের পর এক Compliance-কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যাচ্ছিলো তখন কি তারা কখনো ভেবেছিলো যে একটি প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো থেকে আসলেই একটি ঘূর্ণিঝড়ের সূত্রপাত হওয়া সম্ভব? রানা প্লাজা থেকে শুরু করে তাজরীন গার্মেন্টস, এত বড় বড় ক্যাজুয়ালিটির পরেও আজকের তারিখ পর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলো রিস্ক এন্ড কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মতো ছোট বিষয় ভেবে অবহেলা করে যাচ্ছে। এটার মূল কারণ আসলে দক্ষ লোকবলের অভাব যারা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে বিপদ আসার আগেই বিপদের গন্ধ পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা অংকুরেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হবে।