সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে Meme এখন খুবই পরিচিত একটি শব্দ। ফেসবুক, টুইটার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ— সর্বত্রই দেখা মিলছে Meme। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ব্যবহার করেন আর Meme কী সেটা জানেন না, এমন মানুষ খুব বেশি নেই পৃথিবীতে। আরো অনেকের মতো আপনিও হয়তো ব্যবহার করেন Meme। এই Meme হয়ে উঠেছে ভাবনার আদানপ্রদানের মাধ্যম! গতানুগতিক পোস্ট বা ছবির চেয়ে Meme-র আকর্ষণীয়তা বেশি হওয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এটিকে বেশি পছন্দ করছেন।
Meme – র আবির্ভাব যেভাবে
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে Meme একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি ভাষা যা আমাদেরকে হাসায়, চিন্তা করতে শেখায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি এই Meme-র শুরু কীভাবে? ‘Meme’ শব্দটির উৎপত্তিই বা কীভাবে? Meme-র ইতিহাস সম্পর্কে একটুও কি জানেন আপনি? চলুন, এবার নাহয় জেনেই আসি!
চারদিকে Meme ও ট্রল কালচার দেখে হঠাৎ অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি একেবারেই নতুন কিছু, এমন নয়। Meme-র ইতিহাস ১০০ বছরেরও বেশি আগে শুরু হয়েছিল। Meme ধারণাটির প্রবক্তা জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স। Meme শব্দটা এসেছে গ্রিক শব্দ ‘মিমেমা’ থেকে, যার অর্থ এমন কিছু, যাকে অনুকরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে তার বই ‘দ্য সেলফিস জিন‘ বইয়ে প্রথম Meme শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি এই বইয়ে বলেছেন Meme হল একটি ধারণা যা এক মস্তিষ্ক থেকে অন্যটায় ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে অক্সফোর্ড অভিধানের ভাষায়, Meme হলো কোন ছবি বা ভিডিও বা শব্দ গুচ্ছ যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে দেয় এবং একটা থেকে প্রায়শই অন্যটি ভিন্নতর বা বৈচিত্রপূর্ণ হয়।
কেন জনপ্রিয় হচ্ছে Meme ?
অধিকাংশ Meme-ই আসলে হাস্যরস সৃষ্টি করে। হাসি-ঠাট্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ইনকনগ্রুইটি বা অসংগতি। লাখো কৌতুক পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, অসংগতি তুলে ধরেই এগুলো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাঞ্চলাইন বা শেষ বাক্যে এমন একটা কিছু বলা হয় যা শ্রোতা একদমই আশা করেননি। Meme ঠিক এই কাজই করে। বর্তমানে Meme-কে বলা যায় সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ও গণ–অংশগ্রহণের মাধ্যম।
Meme-র প্রভাব আমরা ২০১৮ সালের ব্রাজিলের নির্বাচনে দেখতে পাই, যেখানে ডানপন্থী জইর বলসোনারো Meme-র মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারেও Meme-র বড় ভূমিকা ছিল। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচনেও আমরা দেখি বাংলাদেশ থেকেই ভাইরাল হওয়া Meme ‘খেলা হবে’। ভবিষ্যতে মূল ধারার রাজনীতিতে Meme আরও বেশি ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন পণ্যের মার্কেটিংয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতো বটেই, এর বাইরেও Meme-র ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
যে জাদুঘরের কথা আমরা জানিনা
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত এত হাজার হাজার Meme পোস্ট হয়। সময়ের সঙ্গে হারিয়েও যায়। কিন্তু কেমন হয় যদি এমন কোনো স্থান থাকে যেখানে জমা থাকলো Meme? এবার দর্শকদের জন্য Meme ও মজাদার বিষয়বস্তু নিয়ে আস্ত একটি জাদুঘরই হংকংয়ে গড়ে উঠেছে ! হংকংয়ের K11 আর্ট মলে তৈরি হয়েছে বিশ্বের প্রথম Meme মিউজিয়াম। 9GAG নামে জনপ্রিয় একটি সংস্থা তৈরি করেছে এই জাদুঘরটি।। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়েই পথচলা শুরু হয় এই জাদুঘরের। সব মিলিয়ে এই জাদুঘরে জায়গা পেয়েছে বিশ্বের ১০০টির বেশি জনপ্রিয় Meme টেমপ্লেট। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্থানের Disappointed Look দেয়া সেই সমর্থকের কথা মনে আছে? ইন্টারনেট দুনিয়ায় তুমুল আলোড়ন তোলা সেই ছবিটিও স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে !
বাংলাদেশে Meme কালচার
আমাদের দেশেও সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেই Meme জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। আরও Specifically বললে, ফেসবুকের মাধ্যমে। গত ডিসেম্বরে দেশের প্রথম Meme ফেস্ট আয়োজন করে কৌতুক ও ব্যঙ্গবিদ্রূপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান eআরকি। একদম শুরুর দিকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা খুব বেশি Meme কালচার সম্পর্কে অবহিত না থাকলেও, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে Meme কালচার বেশ পরিচিতি পেতে থাকে। শুরুর দিকে ট্রল ফেসকে Meme টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ধীরে ধীরে বিদেশি Meme টেমপ্লেট ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে এই Meme কালচারে যুক্ত হয় বাংলাদেশি Meme টেমপ্লেট। তাতে মানুষের কাছে Meme হয়ে ওঠে আরও সহজবোধ্য। বাংলাদেশি Meme গুলোর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মিমারদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। আজকাল, বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান মিমার রয়েছেন যারা তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে Meme কালচারকে আরও সমৃদ্ধ করছেন।
বাংলাদেশে Meme-র জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে Meme টেমপ্লেটগুলোও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। এখন শুধুমাত্র বিদেশি Meme টেমপ্লেট নয়, বাংলাদেশি নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, নিউজ, কার্টুন শো, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেয়া বিভিন্ন রকম ভিডিওর ক্লিপ/স্ক্রিনশট থেকেও Meme টেমপ্লেট তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু বাংলাদেশি Meme কমিউনিটি রয়েছে। এই কমিউনিটিগুলোতে প্রতিনিয়ত নানান ধরণের টপিকে Meme তৈরি হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো কিছুই Meme-র টপিক হতে পারে। এমনকি ইতিহাস, রাজনৈতিক প্রতিবাদ, কর্পোরেট প্রেজেন্টেশন কিংবা এডভার্টাইজিংয়ের মতো টপিকেও Meme-র ব্যবহার হচ্ছে। হয়তো কোনো কবি বা সাহিত্যিক একদিন লিখে ফেলবেন, ‘এই পৃথিবীটা একদিন মিমারের হবে’।