স্যালারি নেগোসিয়েশন জানলে বেতন বাড়বে কয়েকগুণ
আমাদের মধ্যে নেগোসিয়েশন করেন না কে?
সবাই করেন তাই না? রিকশা ওয়ালা মামা থেকে শুরু করে নিজের ব্যবসার জন্য কম বেশি নেগোসিয়েশন করেই থাকে। আমরা কি জানি যে নেগোসিয়েশন করার জন্য কিছু টেকনিক রয়েছে? টেকনিক গুলো জানা থাকলে নেগোসিয়েশন করাটা আমাদের জন্য আরো ও লাভজনক হয়ে উঠবে।।
এই নেগোসিয়েশন জীবনের প্রতিটি ধাপে করতে হয়, শুধু ব্যাবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে না। এ পৃথিবীর যা কিছু ভালো, ধরুন সুখ, সম্পদ, পদবী, ভালোবাসা, নিরাপত্তা, স্ট্যাটাস, প্রেস্টিজ ও সাফল্য, সবাই এসব পেতে চাই। আর এসব আমরা পেতে চাই সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সময় ও সর্বনিম্ন অর্থের বিনিময়ে। এবং এগুলো পেতে হলে আমাদের বিভিন্নভাবে, বিভিন্নজনের সাথে নেগোশিয়েশন করতে হয়। এমনকি ছোট বাচ্চারাও নেগোসিয়েশন করে। তারা জানে যে ছোট ছোট কোলাকুলি এবং সৌহার্দ বিনিময় হচ্ছে সেই মুদ্রা, যার দ্বারা তারা তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নেগোসিয়েশন করতে পারে। স্যালারি নেগোসিয়েশনের বর্তমান অবস্থাটা একটু জেনে নেই।
সাধারণ পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে মাত্র ৩৭% মানুষ স্যালারি নেগোসিয়েশন করে,অন্যদিকে ১৮% মানুষ একবারেই করে না।
এরই সাথে দেখা গেছে ৪৪% চাকরিজীবি বছর শেষে রিভিউ এর সময় তারা স্যালারি নেগোসিয়েশন দিকটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। যার ফলে চাকরি ঠিক থাকে কিন্তু স্যালারি বৃদ্ধি পায় না। তাহলে এখন উপায়? আসুন একটু উপায় গুলি জানি সাথে কিছু শিখি।
স্যালারি নেগোসিয়েশন কে ৩ ভাগ ভাগ করা যায়:
ক) প্রথম চাকরিতে যোগদানের সময় স্যালারি নেগোসিয়েশন :
যেহেতু এই সময়ে কোন কাজের অভিজ্ঞতা না সেহেতু স্যালারি নেগোসিয়েশন এইখানে একটু কঠিন হয়ে যাবে। তখন একমাত্র হাতিয়ার থাকবে শক্তিশালী সিভি এবং সিভিতে থাকা এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটির সার্টিফিকেটগুলি। একই সাথে ভাইভাতে পারফরম্যান্স। তার মানে দুটি জিনিস অবশ্যই জানতে হবে:
১. ক্রিয়েটিভ সিভি লেখা
২. ভাইভা দেওয়ার সঠিক কার্যকরী কৌশল।
খ) প্রমোশনের সময় স্যালারি নেগোসিয়েশন :
১. নিজের যোগ্যতা পরিমাপ করতে শিখুন।
২. সংখ্যার সঠিক প্রয়োগ করুন: ৩৪০০০ না বলে চাহিদাটা ৩৩৭৫০ বলুন। (এটির ব্যাখ্যা অনেক বড় যা দিতে পারছি না আপাতত)।
৩. বার্ষিক রিভিউ এর আগে অবশ্যই আপনার পারফরম্যান্সের একটি আকর্ষনীয় পোর্টফলিও বানিয়ে নিতে হবে।
৪. আপনি আপনার পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য একটি “brag sheet” বানিয়ে নিতে পারেন।
গ)চাকরি পরিবর্তনের সময় স্যালারি নেগোসিয়েশন :
ধরে নিন বর্তমানে আপনি ৪০ হাজার স্যালারিতে চাকরি করছেন। একই জাতীয় একটি কোম্পানি আপনাকে ৪৬ হাজার টাকা বেতন দিতে চাচ্ছে। ৬ মাস পর বাড়িয়ে দেবে বলেছে। আপনি কি জয়েন করবেন? আপনি অবশ্যই জয়েন করবেন না। কারন একটা কোম্পানি থেকে আরেকটা কোম্পানিতে জব সুইচ করতে গেলে কমপক্ষে ৩০% বেতন বাড়তেই হবে। এটা নিয়ম। আপনি হিসাব করবেন বাৎসরিক আয় দিয়ে। অর্থাৎ, আপনার বাৎসরিক আয়কে ১২ দিয়ে ভাগ করবেন। এর ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে বেতন চাইবেন।
অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা বেতনে আপনার বাৎসরিক বেতন আসবে (৪০০০০×১২= ৪৮০০০০) এর সাথে বেতনের অর্ধেক দুই ঈদের বোনাস আরো ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আপনার বাৎসরিক আয় ৫২০০০০টাকা। একে ১২ দিয়ে ভাগ করলে আপনার মাসিক আয় আসবে প্রায় ৪৩০০০ টাকা।
এর ৪০% বাড়িয়ে বেতন চাইতে হবে।
যদি কমপক্ষে ৩০% না বাড়ে তাহলে একজন কর্মীর স্থায়ী জব ছাড়ার কোন দরকার নেই।
যেহেতু আপনি এত বছর কাজ করছেন, কাজেই আপনাকে ৬ মাস কাজ করে বাড়তি কিছু প্রমাণ করতে হবে না।
এছাড়াও জয়েনের পর কবে থেকে ঈদ বোনাস পাবেন এটাও নেগোসিয়েট করে নিতে হবে। কী রকম পারফর্ম করলে কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন, আসা-যাওয়া, থাকা, খাওয়া, নাস্তা ইত্যাদি কোনটা কোম্পানি দিবে আর কোনটা কোম্পানি দিবে না, তা আলোচনা করে নিতে হবে।