বাংলাদেশে এনজিওর ভূমিকা: সমস্যা নিরসনে নীরব সহায়ক
দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব-দ্বীপ দেশ বাংলাদেশ। রাজনৈতিক ও ভৌগলিক কারণে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দেশটি মারাত্মক ঘনবসতিপূর্ণ এবং নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২৬০ জন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি। দেশের প্রায় ৪০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি সমস্যা দেশটিকে গ্রাস করে ফেলেছে। সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকরণ, নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, এই সমস্যাগুলি সমাধান করা সহজ নয়।এই সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এনজিও এবং ডেভেলপমেন্ট সংস্থাগুলো। এনজিওগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল দারিদ্র দূরীকরণ ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে। সত্তরের দশকে যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থার উন্নয়নে এনজিওগুলোর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা স্বকর্মসংস্থান, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, শিশু উন্নয়ন,পরামর্শ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য প্রদান, উন্নত প্রযুক্তির সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয় ও ব্যবহার, ইত্যাদি নানাবিধ সামাজিক উন্নয়নের কাজে সরকারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এনজিওগুলো কাজ করে আসলেও মূলত নব্বই দশকে এনজিওগুলো সাধারণ মানুষের নজরে আসতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সরকার থাকে এসব সংস্থার সহযোগীর ভূমিকায়। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন কর্পোরেট জায়ান্ট অর্থ্যাত মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও তাদের মার্কেটিং পলিসির অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানে ফান্ডিং করে থাকে। তবে ফান্ড পেতে হলে দাতারা প্রথমেই বিবেচনা করেন এই ফান্ড কাজে লাগানোর সক্ষমতা আছে কি-না।
দাতার কাছে প্রজেক্ট প্রোপোজাল জমা দেওয়ার পর, প্রোপোজালটি ভালোভাবে বিবেচনা করে দাতারা এনজিওর সক্ষমতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। তারা অর্থের নিরাপত্তা ও ফলপ্রসূতা নিশ্চিত করতে চায়। তাই সাধারণত প্রথমে ছোট ফান্ডের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে চায়। এরপর সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে পুনরায় বড় অর্থ সাহায্য আসতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কতটা ভারসাম্য আছে এসব ব্যাপারেও দাতা সংস্থাগুলো খেয়াল রাখে।
প্রত্যেক প্রজেক্টের শুরুতেই প্রজেক্টের প্রকৃতি ও বাস্তবতা যাচাই করা জরুরি। প্রজেক্টটি কোন ধরনের, সেটি কতটা বাস্তবসম্মত এবং তার ঝুঁকির দিকগুলো কী বা কতটুকু তা বোঝা প্রয়োজন। এরপর সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। একটি বাস্তবসম্মত প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ জনবল, অর্থসংস্থান ও কার্যকরী সমন্বয় অপরিহার্য। প্রজেক্টের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, সময়সীমা, ব্যয়, কার্যক্রম ও দায়িত্বসমূহ সুনির্দিষ্ট করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি। প্রজেক্টের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে প্রজেক্ট সফল হওয়া কঠিন। প্রজেক্টের বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকরী সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করলে প্রজেক্ট সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
যেকোনো প্রজেক্টের সাফল্য মূলত টিমওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে। একটি সফল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন একটি দক্ষ ও সমন্বিত টিম। টিমের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা ও সমর্থন থাকলেই প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে। এজন্য প্রজেক্ট ম্যানেজারকে তার টিমের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হয়। টিম ভালো করলেই প্রোজেক্ট আউটপুট ভালো হবে। আর টিম খারাপ করলে প্রজেক্টে বিরূপ প্রভাব পড়বে।একটি সফল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজারের মধ্যে লিডারশিপ স্কিল থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রজেক্ট ম্যানেজারকে সংস্থার মিশন-ভিশনের সঙ্গে প্রজেক্টের যোগসূত্র সম্পর্কে তার টিমকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হয় । সবাই যাতে একই উদ্দেশ্যে সমানভাবে নিজের স্কিলকে কাজে লাগাতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে একদল ডেডিকেটেড কর্মীর সম্মিলিত প্রয়াস থাকে।
আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এনজিওগুলোর কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এই চাহিদা পূরণে এনজিওগুলোকে এখনো বিদেশি প্রশিক্ষিত জনশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। আশার কথা বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য যে জনশক্তির প্রয়োজন তার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে দেশীয় জনশক্তি প্রাধান্য দেয়া শুরু হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের শিক্ষিত, দক্ষ, তরুণ-তরুণীদের জন্য NGO ও Development সেক্টরে কাজের যথেষ্ট সুযোগ আছে।
প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট কারিকুলাম ফলো করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল প্রজেক্ট ম্যানেজার। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়কে ফোকাস করে ২০১৭ সালে এবিপি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট (𝐏𝐆𝐃𝐏𝐌) কোর্সটি শুরু করে। একজন সফল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনি NGO, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোর্সটি আপনার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারে।