Blog, Productivity

অফলাইন যুগ থেকে অনলাইনে আসুন

from-offline-to-online
চলুন, ছোটবেলার কোনো একটি বৃষ্টিস্নাত সকালে ফিরে যাই। ঘুম থেকে উঠে হয়তো মনে মনে ভাবছেন আজ আর স্কুলে যেতে হবে না। হয়ত ঠিক তখনই আপনার দাদু বা নানু শোনাতেন যে কিভাবে তারা রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে স্কুলে উপস্থিত হতেন। আপনি হয়ত মনে মনে হাসতেন আর ভাবতেন, এও কি সম্ভব!আপনাকে স্কুলে যেতে মোটিভেট করার জন্যে সেই বয়স্ক মানুষগুলো মজার ছলে কিছুটা বাড়িয়ে বললেও আমরা কিন্তু বিশ্বাস করতাম তাদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা এখনকার দিনের মতো এতটা সহজলভ্য ছিলো না। কিন্তু আপনাকে যদি তখন বলা হতো যে, আপনাকেও প্রতিদিন এই ধরণের কষ্ট সয়ে স্কুলে যেতে হবে, তাতে কি আপনি সম্মতি প্রদান করতেন? কিংবা আজ আপনার সন্তান বা ছোট ভাইবোনকে কি সেই পুরোনো দিনের মতো এতটা কষ্ট সয়ে শিক্ষা চালিয়ে যেতে বাধ্য করবেন?
আপনার উত্তর হবে, “কখনোই না”!
কিন্তু কেন?
কারণ আপনি সহজ জীবনকে কঠিন করে তুলতে চান না। বাসার পাশে বা শহরের সেরা স্কুল/কলেজ ছেড়ে কেনইবা আপনি গ্রামের মেঠোপথ বা নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে চাইবেন?ঠিক তেমনিভাবেই মডার্ন টেকনোলজির সাথে মানিয়ে চলতে এবং মডার্ন টেকনোলজির সাথে আরো বেশি সখ্যতা গড়ে তুলতে আপনার উচিৎ অফলাইন ট্রেনিংয়ের যুগ থেকে অনলাইন লার্নিং বা ই-লার্নিংয়ের যুগে প্রবেশ করা। এর ফলে আপনি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটা উইন উইন সিচুয়েশনে থাকেনকিন্তু কিভাবে?
চলুন একটু জেনে নিই যে অনলাইন লার্নিংয়ে আমরা কী কী ধরণের সুবিধা উপভোগ করতে পারি। আর আমরা নিশ্চিত যে, কারণগুলো জানার পরে আপনার কাছে In-person ট্রেনিংয়ের অপশন থাকার পরেও আপনি অনলাইন ক্লাসকেই বেছে নিবেন।

স্বাচ্ছন্দ্যতা: ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই যেকোনো লোকেশন থেকে আপনি একটি অনলাইন ক্লাসের একসেস নিয়ে নিতে পারেন। এর ফলে আপনি খুব সহজেই আপনার ফ্যামিলি, জব বা এর বাইরের কমিটমেন্টগুলো পূরণ করতে পারেন। কিন্তু ইন-হাউজ ট্রেইনিংয়ে দুটো কমিটমেন্টের একটিকে স্যাক্রিফাইস করতেই হয়।

টেকনোলজি: ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি করতে অনলাইন ক্লাসের অবদান অতুলনীয়। কারণ অনলাইন ক্লাস করতে আপনাকে বেশ কিছু সফটওয়ার এবং টেকনোলজির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয়। আর এসব টেকনোলজি লিটারেসি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আপনি মডার্ন জব মার্কেটে অন্যদের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকবেন।

ফ্লেক্সিবিলিটি: লাইভ ক্লাসের পাশাপাশি ক্লাসের রেকর্ডেড ভার্সন থাকার কারণে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই নিজের সুবিধামতো সময়ে তার ক্লাসগুলো করে নিতে পারে। যার কারণে কোনো ক্লাস লেকচার বা কন্টেন্ট একবারে না বুঝলেও পরবর্তী সময়ে পুনরায় ক্লাসটির রেকর্ডেড ভার্সন দেখে সহজেই সেই শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।

কস্ট ইফেক্টিভনেস: সাধারণত ফেইস-টু-ফেইস ট্রেইনিংয়ের তুলনায় অনলাইন লার্নিংয়ে খরচ কম হয়। কেননা, অনলাইন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে হচ্ছে না এবং ক্লাস করার জন্যে আলাদা ক্লাসরুম সেটাপের প্রয়োজনও পড়ছে না। এর আয়োজনে যেমন খরচ কম, তেমনি ভালো রিসোর্স পার্সনরাও খুব সহজেই অনলাইনে ট্রেনিংয়ে সময় দিতে পারেন। ফলে খরচ অনেকটাই কমে যায়।

রিসোর্সের বিশাল সমাহার: অনলাইন মেথডে খুব সহজেই আপনি বিভিন্ন ধরণের রিসোর্সের একসেস সহজেই নিয়ে নিতে পারবেন, যেমন ডিসকাশন বোর্ড, অনলাইন লাইব্রেরী, মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট, ট্রেইনার বা ক্লাসমেটের সাথে যেকোনো সময় আলাপ-আলোচনার সুবিধা, ইত্যাদি।

বেটার এংগেজমেন্ট: ক্লাসগুলোকে আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ করার জন্যে অনলাইন প্লাটফর্মে প্রায়ই বিভিন্ন ইন্টারএ্যাকটিভ টুলস ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমনঃ কুইজ, পোল, অনলাইন ডিসকাশন, ভিজুয়াল বা অডিও কন্টেন্ট ইত্যাদি।

প্রোগ্রেস ট্র্যাকিং: একজন ট্রেইনার খুব সহজেই আপনার ক্লাস পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারেন এবং আপনার পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় এ্যাকশান গ্রহণ করতে পারেন। ফলে আপনার লার্নিং হয় আরো ইফেকটিভ।

কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস: আপনার পাশাপাশি অনলাইন লার্নিং পরিবেশবান্ধবও বটে! বিশ্বব্যাপীই কাগজের ব্যবহার কমানো হয়েছে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ গাছ কাগজের যোগান দিতে গিয়ে বিপন্ন হচ্ছে না, যার কারণে পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়াও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করতে হয় না বলে জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস হতেও ভূমিকা পালন করছে অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্মগুলো।

আর এই অনলাইনের যুগে যেখানে বাজার-ঘাট থেকে শুরু করে জায়ান্ট কোম্পানি পর্যন্ত অনলাইন হোম অফিসের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেখানে আপনি কেন সময়ের সৎব্যবহারের জন্য প্রো-এ্যাকটিভলি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবেন না? আর আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন চাকুরিজীবি বা ব্যবসায়ী, তাহলে শত ব্যস্ততার মাঝে দিন শেষ করে শুধুমাত্র ফেইস-টু-ফেইস ক্লাস করার জন্য কেনই বা ২/৩ ঘন্টা রাস্তায় কাটাবেন?
আর ছুটির দিনে ক্লাস? চট করে ঘরে বসে ক্লাস শেষ করে পরিবারের কাছের মানুষগুলোকে দিন না আরও একটু সময়! দিন শেষে এই মানুষগুলোর সাথে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর জন্যই তো এত কিছু করা!