করোনা মহামারী: রপ্তানির উলটো চিত্র
করোনাভাইরাসের আঘাতে বিশ্ব জুড়ে ঋণাত্মক জিডিপি (𝐍𝐞𝐠𝐚𝐭𝐢𝐯𝐞 𝐆𝐃𝐏) এর যে স্রোত চলছে বাংলাদেশ কিন্তু তার উলটো দিকে চলছে। এর অন্যতম কারণ হল অনেক বাধা বিপত্তি সত্যেও আমাদের এক্সপোর্ট বা রপ্তানি কিন্তু বন্ধ থাকেনি বরং একটি আন্তর্জাতিক বাজার সাময়িক বন্ধ হয়েছে তো আরেকটি ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট মার্কেট খুজে এক্সপোর্ট চালু রাখা হয়েছে।
রপ্তানি উন্নায়ন ব্যুরো এর রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের সমান পণ্য রপ্তানি করেছে। যা আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ৫০৯ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। রপ্তানির কথা শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে পোশাক খাতের কথা, এই খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শুধু পোশাক নয়, পাট ও পাটজাত পণ্য (▲৩২ শতাংশ) এবং হোম টেক্সটাইলের (▲৪৯ শতাংশ) রপ্তানিও ভালো হয়েছে এবার। এমনকি কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি।
𝐄𝐏𝐁 এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু পোশাক নয়, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিও ভালো হয়েছে এবার। যেমন পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৬ কোটি ডলার। আর হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৭৬ কোটি ডলার থেকে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ১১৩ কোটি ডলার।
কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। এদিকে অর্থের পরিমাণ কম হলেও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া গ্লাসওয়্যার ১২৭, পরচুলা ৭৬, ইলেকট্রিক পণ্য ৭১, কার্পেট ৫৯, বাইসাইকেল ৫৮, রাবার ৩০, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১৮, প্লাস্টিক পণ্য ১৫ এবং বিশেষায়িত টেক্সটাইলের ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশের সব খাতেই যে রপ্তানি বেড়েছে তাও না। পরিমাণে কম হলেও রপ্তানি সবচেয়ে কমেছে জীবন্ত মাছের। কমার হার ৪৫ শতাংশ। ১ কোটি ১৪ লাখ ডলারের জীবন্ত মাছ রপ্তানি হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে। এবার হয়েছে ৬৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রী ২৯, সিমেন্ট ও লবণ ২১, সবজি ২০, কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য ৮ ও টেরি টাওয়েলে রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশ যা সার্বিক এক্সপোর্ট এর খুবই সামান্য।
সার্বিক ভাবে ১৫.১০% এক্সপোর্ট বাড়লেও বাংলাদেশ কিন্তু সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তার কম্পিটিটর দেশগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে আছে যা 𝐔𝐧𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐍𝐚𝐭𝐢𝐨𝐧𝐬 𝐂𝐨𝐧𝐟𝐞𝐫𝐞𝐧𝐜𝐞 𝐨𝐧 𝐓𝐫𝐚𝐝𝐞 𝐚𝐧𝐝 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐦𝐞𝐧𝐭 (𝐔𝐍𝐂𝐓𝐃) ফেব্রুয়ারী ২০২১ এর এক এক্সপোর্ট পারফরমেন্স রিপোর্টে উঠে আসে। সেখানে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া যৌথ ভাবে ০.৩৫ পয়েন্ট নিয়ে একি অবস্থানে আছে, অথচ এই তালিকায় অনেক ভাল অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম (0.৬৩), চীন (০.৫৬), তুরস্ক (0.৫১), ইন্দোনেশিয়া (০.৪৮) এমনকি পাকিস্তান (০.৪২) ।
সুতারং এক্সপোর্টের এই উন্নায়নের ধারা আমাদেরকে আরও বেগবান করতে হবে এবং যেসকল ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি তাতে আরও বেশি জোর দিতে হবে। এর জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি এক্সপোর্টাররা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। করোনা মহামারির কারণে হতাশ না হয়ে আমাদের উচিত এক্সপোর্ট এর জন্য বিকল্প বাজার খুজে বের করা যার জন্য প্রয়োজন হবে দক্ষতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা। জানতে হবে প্রোডাক্টের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, প্রাইসিং পলিসি, ভেলু-চেইন আনাল্যসিস, 𝐋/𝐂, 𝐕𝐀𝐓-𝐂𝐮𝐬𝐭𝐨𝐦𝐬, 𝐂&𝐅 ইত্যাদির নির্ভুল ডকুমেন্টেশন ও অন্যান্য মার্কেটিং ও প্রমোশনাল কার্যক্রম।
নিজেকে প্রশিক্ষিত করার এই মিশনে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে প্রফেশনাল ট্রেইনিং, যুগোপযোগী কন্টেন্ট এবং দক্ষ প্রাক্টিশনারকে যিনি বাস্তবতার আলোকে হাতে কলমে বিষয় গুলো তুলে ধরতে পারেন। আর বড় পরিসরে প্রশিক্ষণ শুরু করার আগে এই বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবিনার, সেমিনার বা ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের ক্ষুধাকে আরও বাড়িয়ে নেয়া যায়। 𝐀𝐜𝐚𝐝𝐞𝐦𝐲 𝐨𝐟 𝐁𝐮𝐬𝐢𝐧𝐞𝐬𝐬 𝐏𝐫𝐨𝐟𝐞𝐬𝐬𝐢𝐨𝐧𝐚𝐥𝐬 -𝐀𝐁𝐏 এমনই একটি ২-দিনব্যাপী ওয়েবিনার আয়োজন করেছে আগামী ১৪ ও ১৬ আগস্ট ২০২১।