Blog, Productivity

কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট ঠিকঠাক না হলে কর্মীরা হারাবে প্রোডাক্টিভিটি

conflict-management

কর্মক্ষেত্রেও হতে পারে নানারকম দ্বন্দ্ব।​
এখন দশটা-পাঁচটার চাকরির পাশাপাশি লং ওয়ার্কিং আওয়ারের জবও ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। অর্থাৎ রোজকার নিত্যসঙ্গী বলতে সহকর্মীরা। মনোমালিন্যের ছায়া তো পড়তেই পারে। ধরুন একসঙ্গে দু’জনে মিলে একটা প্রজেক্ট করছেন। একজনের দেরি হওয়ার কারণে হয়তো প্রজেকটা সময়ে জমা দিতে পারলেন না। ব্যস, লেগে গেল তর্কবিতর্ক। অফিসে আর একটা সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। আপনি হয়তো প্রাণপণ খেটে পুরো কাজটা দারুণভাবে শেষ করলেন, কিন্তু বসের স্বীকৃতি পেলেন সহকর্মী। রাগ তো হতেই পারে। আর এর প্রভাব সরাসরি পড়বে কাজের উপর। কোনও সহকর্মীর হাবভাব, কথাবার্তা, আচরণও আপনার অপছন্দ হতে পারে। আর বসের সঙ্গে মতান্তরও তো কোনও নতুন বিষয়ই নয়।​
আবার অনেক সময় অফিসিয়াল মিটিং এ দেখা যায় একটি বিষয় আলোচনার ক্ষেত্রে একেকজন একেক রকম মতামত দিচ্ছে। মতবিরোধ হয় আবার তা নিয়ে বিতর্ক চলে। আর এত বেশি মতপার্থক্য থেকেই উঠে আসে সবচেয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্তটি।

Conflict management কিংবা দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা যাই বলিনা কেন এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।আসলে চিন্তার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা বিধ্বস্ত অংশটুকু হল দ্বন্দ্ব। এটি মূলত নিজের অভিজ্ঞতা আর দৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্ভাবনে প্ররোচিত করে।

মোটকথা দলগত কাজ কখনই বিরোধ ছাড়া সম্ভব না। কেননা সব মানুষের চিন্তাধারা রুচি দৃষ্টিভঙ্গি এক রকম হয় না। প্রতিটি মানুষ তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। তাই সবার যোগ্যতাকে একসাথে ব্যবহার করতেই এই কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট ধারণাটি এসেছে।

কনফ্লিক্ট এর সমাধান
কিভাবে একটি দ্বন্দ্ব সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারি আমরা?
ধরা যাক একটি প্রজেক্টের কোন কাজটা আগে করা হবে আর কোনটা পরে সেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হল। সাধারনত যখন দীর্ঘকালীন আর স্বল্পকালীন কাজগুলোর পার্থক্য উদ্দেশ্যের সাথে মেলানো যায় না এবং পারফরমেন্সও কাজের সাথে উপযুক্ত না তখন এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে কোম্পানীর কৌশলের সাথে উপযুক্ত একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা যেতে পারে। যেন সেটা দীর্ঘসময়ের জন্য স্থায়ী থাকে।
প্রতিষ্ঠান পরিচালকের বিশেষ করে কনফ্লিক্ট সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠা খুব জরুরী। প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে মতবিরোধের সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। এবং তা থেকেই বের করে নিয়ে আসতে হয় উপযুক্ত সিদ্ধান্তটি। এক গবেষণায় জানা গেছে কোম্পানীর CEO রা তাদের বিশ ভাগ সময় ব্যয় করে শুধুমাত্র কনফ্লিক্ট সমাধানের জন্য। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কিন্তু কোম্পানী ব্যবস্থাপনার সফলতার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে যুক্ত।
দায়িত্ব কাধে তুলে নিতে হলে যোগাযোগ এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা থাকাটাই প্রথম শর্ত। এই বিষয়গুলোতে জোর দিয়ে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াটাই কিন্তু আমাদের কাজ।
দু’টো বাসনও পাশাপাশি থাকলে ঠোকাঠুকি লাগে, মানুষ তো কোন ছার! কনফ্লিক্ট আসলে অনেকটা খাবারে নুনের মত, না থাকলে যাবে খাওয়ার বারোটা বেজে, আবার অতিরিক্ত হলেও বিড়ম্বনা।আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বন্দ বা কনফ্লিক্ট। শত চেষ্টা করলেও একে পুরোপুরি এড়িয়ে থাকা অসম্ভব।

এবার দেখে নেওয়া যাক কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের মূল পাঁচটি কৌশল । এই স্ট্র্যাটেজিগুলো আসলে কিছু মানুষের কয়েকটি সাধারণ প্রবণতা বই কিছু নয়, এগুলির কার্যকারিতা ভিন্ন। তাই সবসময় এক কৌশল খাটবে না, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কনফ্লিক্ট ম্যানেজ করার পাঁচটি মূলমন্ত্র হলো:

১)পরিহার
কিছু মানুষের প্রবণতা থাকে দ্বন্দ্ব বা বিরোধের সমস্যা এলেই পারতপক্ষে তাকে এড়িয়ে যাওয়া। এটা কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। তবে এড়িয়ে গেলে তো আর উদ্বেগ কমবে না, কনফ্লিক্টেরও অবসান হবে না। সমস্যাকে এড়িয়ে গেলে তার সমাধানও আপনাকে এড়িয়ে যাবে। আর ক্রমাগত এভাবে দ্বন্দ্বকে এড়িয়ে চললে আপনি একঘরে হয়ে পড়তে পারেন। তবে মাঝে মাঝে কিছু বিশেষ অবস্থায় কনফ্লিক্ট এড়িয়ে চললে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিজেই স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। সামান্য কারণে মতবিরোধ হলে বা আরও বড় কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে কনফ্লিক্টকে এড়িয়ে চলাই ভাল। অত্যধিক উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেও দ্বন্দ্বে না জড়ানো উচিত। আর যদি এমন হয় যে পরিস্থিতি পাল্টানোটা আপনার ক্ষমতার বাইরে, সেক্ষেত্রেও ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

২)সমন্বয়
কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হলে অনেকেই তাড়াতাড়ি মিটমাট করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে যদি তাঁদের নিজেদের বক্তব্য তেমন গুরুত্ব না পায়, তাহলেও তাদের ভ্রুক্ষেপ থাকে না। অন্যের উদ্দেগকে প্রশমিত করাটাই তাঁদের কাছে বিরোধ মেটানোর উপায়। সময়টাই আসল লক্ষ্য, দ্বন্দ্বে অমঙ্গল। এটাকে এক ধরনের আত্মত্যাগও বলতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে মানিয়ে নিলেই সবচেয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান। হয়। যদি ঝামেলার কারণটা আপনার কাছে তুচ্ছ হয় বা আপনার যদি মনে হয় আপনি নিজে ভুল, সেক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয়। সম্পর্ক রক্ষা করাটা প্রধান লক্ষ্য হলে মানিয়ে নেওয়া ভাল স্ট্র্যাটেজি। তবে বারবার মানিয়ে নিলে মর্যাদাহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশ্বাসযোগ্যতার ভিতটা নড়ে যায়।

৩)আপস
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়। সব পেলে নষ্ট জীবন। এঁরা কোনও মতবিরোধ হলে প্রথমেই আপস করার পক্ষপাতী হয়ে পড়েন। তাদের মতে এতে সকলের দিকটাই গুরুত্ব পায়, তাই এর চেয়ে ভাল উপায়ে মেটানো সম্ভব নয়। কমপ্রোমাইজ় করলে একটা সাময়িক সমাধানের সূত্র বেরর ঠিকই, তবে স্থায়ী কোনও সুরাহা কিছু হয় না। যদিও কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে আপস করাটাই দ্বন্দ্ব দূর করার সবচেয়ে ভাল উপায়। যখন দু’পক্ষেরই মোটামুটি সমান ক্ষমতা থাকে বা যখন লক্ষ্যটা পূর্ণ হওয়া অত গুরুত্বপূর্ণ নয় তখন আপস করে নিলে সমস্যা মিটে যায়। দু’পক্ষই মাঝামাঝি এসে সমঝোতা করায় সময়টাও অনেক বেঁচে যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে স্থির থাকা দরকার।

৪)সহযোগিতা
এই স্টাইলকেই বিশেষজ্ঞরা কনফ্লিক্ট মেটানোর সেরা উপায় বলে অভিহিত করেছেন। এতে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। এখানে সহযোগিতা করা মানে নিজের লক্ষ্যকে বিসর্জন না দিয়ে অন্যের দিক থেকে তাঁর সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করা এবং গভীরে গিয়ে সমস্যাকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা। এতে সব পক্ষেরই মতামত গুরুত্ব পায় অথচ কাউকেই কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয় না। এই স্ট্যাটেজি সবচেয়ে ভাল কাজ করে যদি পারস্পরিক বিশ্বাসটা অটুট থাকে এবং যখন সব পক্ষই নিজের ভাবনায় বদল আনতে রাজি হয়। তবে এইভাবে বিরোধ মেটানোটা কিন্তু সময়সাপেক্ষ, এতে দ্রুত মুশকিল আসান হয় না।

৫)প্রতিদ্বন্দ্বিতা
অতিরিক্ত প্রতিযোগিসুলভ মনোভাব কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কিছু মানুষ যেমন কারও সঙ্গে তুমুল ঝামেলায় জড়ালেও নিজের লক্ষ্যে সর্বক্ষণ স্থির থাকেন। নিজের কথাটাই তাঁদের কাছে বেদবাক্য। অন্যের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া তো দূর অস্ত, পাত্তাও দেন না এঁরা। এঁদের কাছে নিজের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়াটাই দ্বন্দ্ব কাটানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। তবে জীবনে মাঝে মাঝে কম্পিটিশনেরও প্রয়োজন থাকে। যখন আপনি নিশ্চিত যে আপনার বক্তব্য নির্ভুল তখন অকারণে আপস করার দরকার নেই। হাতে সময় খুব কম থাকলেও এই উপায়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত। তবে সবসময় এই মনোভাব কিন্তু বিপজ্জনক।

এক সাথে কাজ করতে গিয়ে মনোমালিন্যের ফলে নষ্ট হয় প্রোডাক্টিভিটি, ক্রিয়েটিভিটি সহ অনেক কিছু। আপনি যদি একজন লিডার হন তবে আপনি নিশ্চয়ই প্রতিনিয়ত এমপ্লয়িদের এই ব্যাপারটি দেখে অভ্যস্থ।
সুতরাং, আপনি যদি না জানেন কিভাবে এই কনফ্লিক্ট ম্যানেজ করবেন তবে কিন্ত কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে। অফিসের সঠিক পরিবেশ বজায় রাখতে একজন লিডার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট।